"পর্য্যায়সারণীর গান"
প্রথমেই হাইড্রোজেন, পরে হিলিয়াম;
পর্য্যায়সারণীর গান শুরু করিলাম।
লিথিয়াম, বেরিলিয়াম, বোরণ, কার্বণ;
পর পর এসে যায়, বাড়ে ইলেকট্রণ।
কার্বণ মৌল প্রকৃতিতে নানা রূপে রয়;
হীরক আর কোক তার রূপভেদ হয়।
নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন মিলিয়া বাতাস;
অক্সিজেন গ্যাসে মোরা নিতে পারি শ্বাস।
তারপরে নবম মৌল, নামটি ফ্লুরিণ;
মঁয়সার হাতে ধরা দিল এক দিন।
দশে এল নতুন গ্যাস, নামটি নিয়ন;
বাতির ভিতরে করে আলো বিকিরণ।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন, বিক্রিয়া না করে;
শেষ কক্ষ আছে পুরা ইলেকট্রণে ভরে।
এগারতে সোডিয়াম ক্ষারধাতু হয়,
বার নম্বরে জানি ম্যাগনেসিয়াম রয়।
অ্যালুমিনিয়াম এল, তেরো নম্বর;
চৌদ্দতে সিলিকন থাকে তারপর।
বালির ভিতরে জানি আছে সিলিকণ,
উহা পেতে হলে কর বালি বিজারণ।
তারপরে ফসফরাস ও সালফার রয়;
সালফার করে নানা রোগ নিরাময়।
সতের নম্বরে ক্লোরিণ হল হ্যালোজেন;
লবণেতে আছে জেনো, লভ তার জ্ঞান।
আঠারোতে আর্গন, বাতাসেতে পাই;
নিষ্ক্রিয় গ্যাস উহা, কোনো কাজ নাই।
পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, স্ক্যাণ্ডিয়াম,
টিটানিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, এল ক্রোমিয়াম।
পঁচিশে ম্যাঙ্গানিজ আর ছাব্বিশে আয়রন;
তারপরে কোবাল্ট, নিকেল --- জানে সর্ব্বজন।
উনত্রিশ নম্বর ঘরে তাম্র বসে রয়,
তিরিশেতে জিঙ্ক ধাতু আমাদেরই হয়।
গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম আর আর্সেনিক;
একত্রিশ, বত্রিশ, তেত্রিশে হয় ঠিকঠিক।
সেলেনিয়াম, ব্রোমিন এল তারপর;
ক্রিপ্টন নিষ্ক্রিয় গ্য়াস, ছত্রিশে ঘর।
পরমাণু ক্রমাঙ্কের হয়ে যায় বর্দ্ধন,
পাউলির নীতি মেনে ব'সে ইলেকট্রণ।
বিরানব্বইখানি মৌল প্রকৃতিতে পাই;
উহাদের আঠারো শ্রেণী, সাত পর্য্যায়।
ডান দিকে থাকে যত হ্যালোজেনগণ,
ওরা বানাইতে পারে সামুদ্রিক লবণ।
বাম দিকে মহাতেজা ক্ষারধাতুগুলি,
হ্যালোজেনদের সাথে করে চুলোচুলি।
সাঁইত্রিশে রুবিডিয়াম নামে মৌল রয়;
তারপরে স্ট্রনশিয়াম, ইট্রিয়াম হয়।
জারকোনিয়াম, নায়োবিয়াম, মলিবডেনাম;
নব টেকনিকে আসে টেকনিসিয়াম।
রুথেনিয়াম, রোডিয়াম ও প্যালাডিয়াম;
সাতচল্লিশে রূপা, তাকে বলি আর্জেণ্টাম।
ক্যাডমিয়াম, ইণ্ডিয়াম, টিন এসে যায়;
টিনের প্রলেপ দিলে লোহা টিকে যায়।
এ্যাণ্টিমণি নামে মৌল আসে একান্নয়,
রোমাণেরা স্টিবিয়াম নামে তাকে কয়।
টেলুরিয়াম, আয়োডিন, জেনন, সিজিয়াম;
তারপরে ছাপান্নতে হয় যে বেরিয়াম।
তারপরেতে সারণীতে শাখা এসে যায়;
ল্যান্থানাইড মৌল আসে, আলাদা পর্য্যায়।
সাতান্ন নম্বর থেকে একাত্তর নম্বর,
ল্যান্থানাইড মৌলগুলি বাঁধে নীচে ঘর।
ল্যান্থানামে ল্যান্থানাইড মৌল শুরু হয়;
সেরিয়াম, প্রাসিওডিয়াম, নিওডিয়াম রয়।
প্রোমেথিয়াম, সামারিয়াম, ইউরোপিয়াম,
গ্যাডোলিনিয়াম আসে, আসে টারবিয়াম।
ডায়াসপ্রোসিয়াম, হোলবিয়াম, এরবিয়াম;
থুলিয়াম, ইটারবিয়াম, আসে লুটেসিয়াম।
ল্যান্থানাইড মৌলগুলি এইভাবে শেষ হয়;
ফিরে আসি মূলপথেতে, মেণ্ডেলিফের জয়!
মূলপথেতে বাহাত্তরে আছে হাফনিয়াম;
তিয়াত্তরে কষ্টেসৃষ্টে পাও গো ট্যাণ্টালাম।
উলফ্রাম বা টাংস্টেন চুয়াত্তরে রয়;
তাই দিয়ে বাল্বের ফিলামেণ্ট হয়।
রেণিয়াম, অসমিয়াম, ইরিডিয়াম এল;
তারপরে আটাত্তরে প্লাটিনাম হল।
প্লাটিনাম সে বরধাতু, বহু টাকা দাম;
তারপরে এল সোনা, পারা, থ্যালিয়াম।
বিরাশি নম্বরে সীসা নামে ধাতু রয়,
তেজষ্ক্রিয় মৌলগুলি ক্ষয়ে সীসা হয়।
বিসমাথ, পোলোনিয়াম আর অ্যাস্টাটিন;
শেষেরখানি পঁচাশিতে, টিকে অল্প দিন।
তারপরে রেডন এল ছিয়াশি নম্বরে,
নিষ্ক্রিয় সে তবু তেজষ্ক্রিয় রশ্মি ধরে।
ফ্রান্সিয়াম সে ফ্রান্স দেশে আবিষ্কৃত হয়;
রেডিয়ামে রশ্মি আছে, পেলে পরিচয়।
অ্যাক্টিনিয়াম, থোরিয়াম অ্যাক্টিনাইড ওই;
প্রোটাক্টিনিয়াম আসিল, সে একানব্বই।
বিরানব্বইয়ে ইউরেনিয়াম সুবিখ্যাত হয়;
প্রাকৃতিক মৌলদিগের শেষে ইহা রয়।